আল্লাহতে নিমজ্জিত না হইয়া কোরান ও হাদিসের অর্থ লিখিবার দুঃসাহস একপ্রকার ঔদ্ধত্য বিশেষ। কারণ সে অবস্থ...
আল্লাহতে নিমজ্জিত না হইয়া কোরান ও হাদিসের অর্থ লিখিবার দুঃসাহস একপ্রকার ঔদ্ধত্য বিশেষ। কারণ সে অবস্থায় ভুল-ত্রুটি অনিবার্য। যে-কোরানকে পবিত্র না হইয়া (অর্থাৎ মানবীয় ভাব তথা “দুনিয়া” হইতে পবিত্র না হইয়া) স্পর্শ করার সাধ্যই মানুষের নাই, অর্থাৎ অন্তর পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত ইহার ভাবধারা সঠিক অনুধাবন করা যায় না, সেই কোরান ও হাদিসে উল্লিখিত “মসজিদ পরিচয়” বিষয়ক উক্তিসমূহের ব্যাখ্যা দান করা এবং উহাদের উপর কোনরূপ মন্তব্য প্রকাশ করা আমার মত লোকের পক্ষে কতটুকু দুঃসাধ্য, তাহা বলাই বাহুল্য। এইরূপ অসুবিধা ও বিরাট বাধা থাকা সত্বেও প্রচলিত মতামতের মধ্যে এত বেশি ভুল এবং অসামঞ্জস্য বিদ্যমান রহিয়াছে যে, তাহা দেখিয়া সত্যিই মনের মধ্যে তীব্র বেদনা অনুভুত হয়। এইজন্য এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় ব্রতী হইলাম। যদি কোন জ্ঞানবান পাঠক দয়া করিয়া পুস্তকের ভুল-ত্রুটি দেখাইয়া দেন, তাহা হইলে অচিরেই উহা লিপিবদ্ধ করিয়া এই পুস্তকের পাঠকদিগকে অবগত করান হইবে–এইরূপ আশা করিয়াই এই পুস্তক প্রকাশের ভরসা পোষণ করিলাম। “এলহাম” এর দ্বারা চালিত হইয়া কোরান-হাদিসের কথা লিখিতে না পারিলে তাহাতে ভুল হওয়া অনিবার্য। অনিচ্ছাকৃত ভুল আল্লাহ ক্ষমা করিয়া থাকেন।কথার পুনরুক্তি দেখিয়া আশা করি পাঠক বিরক্তি অনুভব করিবেন না, ধৈর্য ধরিয়া পড়িয়া লইবেন। ভাবকে সহজবোধ্য করিবার জন্য কথার পুনরুক্তি অনিবার্য। কোরান মজিদের সমস্ত কথাও একই তৌহিদের পুনরুক্তি। অবশ্য কোরান মজিদের প্রকাশভঙ্গী অত্যন্ত চাতুর্যপূর্ণ ও বিজ্ঞানময়। এইজন্য উহা একঘেয়েমীর বিরক্তিকর ভাব হইতে মুক্ত।এই পুস্তকটি সংক্ষিপ্ত করিয়া লিখিলে তাহা হইত সহজবোধ্য ও সুন্দর। যেহেতু এই পুস্তকে এমন একটি চিন্তাধারা পরিবেশন করা হইয়াছে, যাহা সমাজে সাধারণভাবে প্রচলিত হয় নাই; সেইহেতু কোন কোন বক্তব্যকে বিস্তারিতভাবে বলিবার প্রয়োজনবোধ করিয়াছি, যেন পাঠকের মনে নূতন ভাবধারাটি বদ্ধমূল হইতে পারে।জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে “বিশ্বজনীন মসজিদ”-এর স্বরূপ এই পুস্তকে অঙ্কিত করা হইয়াছে। পুস্তকটি পাঠ করিলেই বুঝা যাইবে যে, সত্যিকার বিশ্বাসীর মসজিদ বিশ্বজনীন (Universal) এবং তাহা কোনরূপ গোষ্ঠী-স্বার্থ অথবা ব্যক্তি-স্বার্থ দ্বারা কুক্ষিগত অথবা কলুষিত করা যায় না। স্রষ্টা স্বয়ং সার্বজনীন; তাই তাঁহার সৃজিত মসজিদও সার্বজনীন।আল্লাহ চাহেন, মানুষ “বিশ্ব মসজিদ” তৈরী করিয়া উহাতে প্রবেশাধিকার লাভ করুক এবং তথায় কর্তৃত্ব সহকারে স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিত থাকুক। কিন্তু মানুষ উহা হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া আপন ইচ্ছামত আলাদা করিয়া দাঁড় করাইয়াছে তাহাদের খেয়াল মাফিক ক্ষণস্থায়ী খেয়ালী মসজিদ। তাই বিশ্বে বিভিন্ন মতের উপাসনালয় গড়িয়া উঠিয়াছে এবং তাহা হইতে মিথ্যা আত্মকলহের অপপ্রচার বিশ্বময় ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ফলতঃ ধর্মপ্রচার-নীতি রাষ্ট্র-নীতির নিষ্ঠুর বন্ধনে আসিয়া দাসত্বের হীনতা বরণ করিয়া লইতে বাধ্য হইয়াছে; কিন্তু সার্বজনীন মসজিদকে পার্থিবতায় আবদ্ধ করে কাহার সাধ্য?